কোনো দেশের মানুষ সাধারণত তখনই সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে যখন সরকারের কর্মকাণ্ড বা নীতির মাধ্যমে জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা, এবং মৌলিক চাহিদাগুলো উপেক্ষা করা হয়। জনগণের ক্ষোভ ও অসন্তোষ তখনই চরমে পৌঁছায় যখন তারা দেখে যে সরকার তাদের কথা শুনছে না বা জনগণের কল্যাণের বিপরীতে কাজ করছে। কয়েকটি প্রধান কারণ নিম্নরূপ:
১. দমনমূলক শাসন ও স্বৈরাচারিতা:
যখন সরকার দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে এবং জনগণের বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, এবং নাগরিক অধিকার হরণ করে, তখন মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে। স্বৈরাচারী শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে সাধারণত আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
২. অর্থনৈতিক সংকট ও বেকারত্ব:
যদি কোনো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়, দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, এবং বেকারত্ব বাড়ে, তখন মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। জনগণ যখন তাদের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন অসন্তোষ তৈরি হয়।
৩. দুর্নীতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা:
যখন সরকার বা শাসকগোষ্ঠী দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষের জন্য সেবাসমূহ ঠিকমতো প্রদান করতে ব্যর্থ হয়, তখন জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। দুর্নীতির কারণে সঠিক সেবা না পাওয়া এবং সম্পদের অসম বণ্টনও আন্দোলনের কারণ হতে পারে।
৪. নির্বাচনী জালিয়াতি ও অনিয়ম:
যদি কোনো নির্বাচনে জালিয়াতি হয় বা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকে, তখন মানুষ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে। নির্বাচন যদি অবাধ ও সুষ্ঠু না হয় এবং সরকারের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তখন জনগণের অসন্তোষ দেখা দেয়।
৫. মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সামাজিক অবিচার:
মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সামাজিকভাবে অন্যায়ভাবে টার্গেট করা হলে, জনগণ ফুঁসে উঠতে পারে। জাতিগত, ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িকভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়িয়ে দেয়।
৬. যুদ্ধ বা সামরিক হস্তক্ষেপ:
যখন একটি সরকার নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে বা যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। যুদ্ধে জনগণের সম্পদ ধ্বংস এবং নিরীহ প্রাণহানি হলে মানুষ সরকারের বিরোধিতা করে।
৭. প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সংকট ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা:
যদি কোনো সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি বা সংকট ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থ হয় এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখনও সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু হতে পারে।
মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে যখন তারা অনুভব করে যে সরকারের কাজের মাধ্যমে তাদের জীবনমান, স্বাধীনতা, এবং অধিকারগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।